দেশী ‘ফলচাষী’ কেরামত উল্লাহ বিপ্লব!
কেরামত উল্লাহ বিপ্লব । মাঠের সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি যার বেশি। এই মধ্য বয়সেও ঘুরে বেড়ান টেলিভিশনের ভারী ট্রাইপড কাধে নিয়ে নিরন্তর। কাজ করেন এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে, তার আগে বন্ধ হ্ওয়ার আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন চ্যানেল ওয়ান এ।
সম্প্রতি তিনি একজন ফলচাষী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। পৈত্রিক নিবাস রংপুরের পীরগন্জে প্রায় ১৫ বিঘা জমি জুড়ে দেশী জাতের প্রায় আড়াই শতাধিক ফলের গাছ রোপন করেছেন, ফল ও আসতে শুরু করেছে বেশ কিছু দিন। কথা হচ্ছিল তার সাথে।তবে তার আগে তার ভাবনার কথা তুলে ধরা প্রসঙ্গত। বেশ কিছু দিন আগে তিনি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন যেমন করে;
“গ্রাম থেকে শহরে এসেছি ১৭ বছর আগে। তার আগের কৈশোর-তারণ্যের দুরন্ত সময়ের অনেক কিছুই গ্রাম থেকে দেখা। এরমধ্যে মনে গেঁথে আছে উত্তরের কৃষি ব্যবস্থাপনা। পারিবারিকভাবে কৃষিজীবি না হলেও গ্রাম সাংবাদিকতার সুযোগে জেলা থেকে জেলা ঘুরে বেড়ানোর সুবাদে দেখেছি এ অঞ্চলের কৃষি। একসময় খবরের কাগজে অনেক লিখেছিও সেসব নিয়ে। তাই ফসলের ক্ষেত্রে পাবনার বাঙ্গি, নাটোরের তরমুজ, রাজশাহীর আম, নওগাঁর ধান, বগুড়া-রংপুরের আলু, দিনাজপুরের লিচু, গাইবান্ধার কলা এসব শস্য-ফলের সুখ্যাতি দেখেছি ১৮/২০ বছর আগেও। তখন ফসল ফলাতে আমাদের চাষীরা ছিলেন প্রকৃতি আর জৈব নির্ভরতায়। চাষাবাদ হতো লাঙ্গলে। জমিতে পড়তো গোবর-ছাই সার। আগাছা দমনে সার নয়, চলতো নিড়ানী। এখন তা পুরোপুরিই বদলেছে।
জেলাওয়ারী এসব শস্য-ফলের আবাদে প্রায় সব কৃষকেরই নির্ভরতা রাসায়নিক সার-কীটনাশকে। ফসল তোলার পরও তাতে ব্যবহার হচ্ছে, কার্বাইড-ফরমালিনের মতো কেমিক্যাল। এতে ফলন হয়তো কিছুটা বেড়েছে। দামও খানিক বেশি। কিন্তু, ক্ষতি কতোটুকু তা কি কেউ ভেবেছি ? অবাক হই, কৃষি ব্যবস্থায় এমন ‘মহামারি’ দেখে। কষ্ট লাগে। ‘সবুজ কৃষি’ এখন ‘খাদ্যে বিপজ্জনক’ । খুব শিগগির এই ‘মহামারি’ থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। খাওয়ার জন্য আমাদের সবারই এখন খুব দরকার জৈব (অর্গানিক) চাষের তাজা, স্বাস্থ্যকর ফল-শস্য। দরকার শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলন। আমি নিজে থেকেই এ আন্দোলনে নামতে চাই। শুরু করেছি সে সেই প্রচেষ্টা।
রংপুরের পীরগঞ্জে কিছু আবাদী জমি আছে। বিঘে দশেক হবে। সাথে আছে, নিজের অনেক স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্খী। তাদের সাথে নিয়ে একটি কৃষি খামার গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। প্রথম ধাপে ১০ বিঘা জমি। হবে নানা জাতের ফল-শস্য। আপাতত আম, লিচু, কামরাঙ্গা, জলপাই, জামরুল বাগান। ফলের জাত দেশী। আবাদও হবে পুরনো ধাঁচে। স্বাস্থ্যে তিকর এমন সার-কীটনাশক বাদে। পাশে একটি গবাদী খামারও তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। এতে পুষ্টিমান বজায় রেখে দুধ আর দুধে তৈরি কিছু পন্য। খামারের পুরো ব্যবস্থাপনাতেই প্রধান থাকবে প্রাকৃতিক চাষাবাদ ও জৈব পদ্ধতি। এসব করে আশেপাশের অন্য বন্ধু-স্বজন পরিচিতজনদেরও উৎসাহিত করতে চাই আমার মতো করে। এটি আমার সবুজ স্বপ্ন । পীরগঞ্জের তুলারাম মজিদপুরে মহাসড়কের পাশে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে মাত্র। চলছে গোছগাছের কাজ।“
কেরামত বিপ্লব জানান, ২০০৩ থেকে শুর তার বাগান তৈরীর জন্যে জমি প্রস্তুতকরণের কাজ। তবে ফলের চারা রোপন করা হয়েছে বছর ৪ আগে। পতিত জমি ছিল এটা। এখানে আম, জামরুলের দেশী ফলের গাছ ২৫০ এর বেশি। কোন কাঠের গাছ নেই এখানে। এগুলো আন্চলিকজাতের ফল যেমন হাড়িভাঙ্গা, আম্রপলি, সিদুরকানি, প্রভৃতি জাতের আম।
কেন এই চাষাবাদে আগমন?
প্রথমত, আমরা নিজেদের পরিবার আর আমাদের বাচ্চাদের খাবার জন্য বাজার থেকে এখন আর ফল-মূল কিনতে পারি না। শতকরা ৯৫ ভাগ লিচু আর ৮০ ভাগে আমে বিষাক্ত কেমিকেল দেয়া হচ্ছে। প্রথম তাড়নাটা এসেছে পরিবারের মুখে সুস্থ পুষ্টি তুলে দেবার জন্য। এখন পর্যন্ত বানিজ্যিক বিপননে যাওয়া হয়নি। মাত্র ১৫-২০ ভাগ গাছে ফল এসেছে। ৫০ ভাগ গাছে যখন ফল আসবে,তখন ২-৩ লক্ষ টাকা বিক্রি করা সম্ভব হবে, স্থানীয় বাজারে।
সময় দেন কিভাবে?
আমি প্রতেক মাসে যাই। ২ দিন করে সময় দেই। অন্যন্য লোকদের দায়িত্ব দিয়ে দেয়া আছে। সার, কীটনাশক একদম -ই দেই না বলা চলে। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা যেভাবে জৈব সার দিয়ে চাষ করতেন,সেটা করার চেষ্টা করছি। ৪ জন মানুষ এটা নিয়মিত দেখভাল করে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
অনেকের জমি পড়ে আছে। আমাদের মাত্র ১৫ বিঘা আছে, অন্যদের সাথে নিয়ে ১৫০০ বিঘা জমি তে যদি আমরা গ্রাম ভিত্তিক খামার করতে পারি। যেখানে দেশী ফল আর সবজির চাষ করতে পারি। উপজেলায় আমরা শো-রুম করবো। দেশী ফল নামে। ফসলের সময় আমরা বিত্রি করবো,বাকী সময় অন্যন্য সবজি বিক্রি করবো। বিনা সুদে কোন জায়গা থেকে যদি ঋন পাই সে চেষ্টাই করছি,একটা মডেল খামার করার জন্য।